নিজস্ব প্রতিনিধি: ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শনে আসা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. আবু জাফরের সঙ্গে তর্কে জড়ানোর কারণে স

নিজস্ব প্রতিনিধি:
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শনে আসা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. আবু জাফরের সঙ্গে তর্কে জড়ানোর কারণে সহকারী অধ্যাপক ডা. ধনদেব চন্দ্র বর্মণকে শোকজ ও দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। রোববার বেলা ১১টার দিকে তিনি হাসপাতাল পরিচালকের কাছে শোকজের জবাব জমা দিয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন।
ডা. ধনদেব চন্দ্র বর্মণ মুঠোফোনে গণমাধ্যমকে জানান, শোকজের চিঠি হাতে পেয়েই হাসপাতালের পরিচালকের কাছে জবাব জমা দিয়েছি। ডিজি বয়স্ক মানুষ, আমারও কিছু বেয়াদবি হয়েছে। আমি আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছি।
এরআগে শনিবার (৬ ডিসেম্বর) ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান মিলনায়তনে আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিতে আসেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি মো. আবু জাফর। সেমিনারের আগে তিনি হাসপাতাল পরিদর্শন করেন। এ সময় জরুরি বিভাগের ক্যাজুয়ালটি অপারেশন থিয়েটারে গিয়ে ডিজি কক্ষে রাখা টেবিলের কারণ জানতে চাইলে ডা. ধনদেব চন্দ্র বর্মণের সঙ্গে তর্কে জড়ান।
ঘটনার পর হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. গোলাম ফেরদৌস বিকালে ধনদেব চন্দ্র বর্মণকে শোকজ প্রদান করেন। তাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) মাইনউদ্দিন খান বলেন, আমরা ওই চিকিৎসককে শোকজ করেছি এবং দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছি। শোকজের জবাব দিয়েছেন, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করবেন।
অন্যদিকে, তর্কে জড়ানোর কারণ প্রসঙ্গে ডা. ধনদেব চন্দ্র বর্মণ গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা সবসময় মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকি যেন কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে। ২০২৩ সালের আগস্ট মাস থেকে আমি এখানে দায়িত্ব পালন করছি। এ পর্যন্ত কোনো দুর্ঘটনা বা অশোভন আচরণ ঘটেনি। আমি খুব সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করছি এবং আমাদের পরিচালক, সহকারী পরিচালক ও ডেপুটি ডিরেক্টরের তত্ত¡াবধানে সব কিছু সুন্দরভাবে চলছে। ডিজির কাছ থেকে গুরুজনের মতো আচরণ আশা করেছিলাম, কিন্তু তিনি এসে সমস্যার কারণ না জেনে টেবিল নিয়ে তুচ্ছভাবে কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, আমি তিনবার পরিচয় দিলেও আমাকে তুচ্ছভাবে দেখানো হয়েছে। আমার চাকরি শেষের দিকে, আর এক বছর পরেই পিআরএলে চলে যাব। ২০১৩ সালে এমএস করেছি, ২০২৫ সালে সহকারী অধ্যাপক পদ পেয়েছি। এখনও জেনারেল সার্জারিতে কোনো অপারেশন করার সুযোগ হয়নি। এ প্রেক্ষাপটে সমস্যা দায় প্রশাসনের অবহেলা।
ডা. ধনদেব অভিযোগ করেন, আমার গাইনি বিভাগের একজন ডাক্তার এখানে জেনারেল সার্জন হিসেবে কাজ করছেন, অথচ তার দায়িত্ব মূলত গাইনি বিভাগে। এটি মিস-ম্যানেজমেন্টের উদাহরণ। স্বাস্থ্যসেবা এখন ‘উদ্ভট উটের পিঠে’ চলছে। কেউ দায়িত্ব পালন করছে না।সাব-সেন্টার থেকে উঠে আসার পরও ওষুধ চুরি হয়। দায়িত্ব পালন না করলে, কাজ করতে গেলে টাকা দিতে হয়। সব জায়গায় দুর্নীতি, এই কারণেই আমার কাজের প্রতি মানসিকতা নেই।
আমি সাসপেনশন চাই, সরকারি চাকরি করতে চাই না। যারা স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে রাজনীতি করে, তারাও ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করে না।
তিনি আরও বলেন, গবেষণার ক্ষেত্রেও দেশের স্বাস্থ্যসেবা সম্পূর্ণ ভ্রান্তির মধ্যে চলছে। এখানে শুধু কাগজে কাজ হয়, সত্যিকারের গবেষণা হয় না। আমি এগুলো দেখে বিরক্ত। ডিজিকে আমি গুরুজনের মতো ভাবছিলাম, গাইডলাইন পাব বলে। কিন্তু তিনি এসে শুধু টুল-উপকরণ নিয়ে প্রশ্ন করেন। আমরা আরও আপগ্রেডেডভাবে কাজ করতে চাইলে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা নেই।
ডা. ধনদেব বলেন, আমি দিন-রাত হাসপাতালে থাকি। রাত তিন-চারটায়ও সমস্যায় ছুটে আসি। ২৪ ঘণ্টা রিলেটেড থাকি। আমার সহকর্মীরা সবাই প্রফেসর হয়েছেন, আমি নানা কারণে ব্যর্থ হয়েছি। ডিজি অফিস থেকে ট্রেনিং পোস্টের বিষয় শুনতে হয়। সব মিলিয়ে, স্বাস্থ্যসেবা এখন সক্ষম কারও হাতে নেই। এ কারণে যদি আমাকে সাসপেনশন দেওয়া হয়, তাতেও আমি খুশি।
COMMENTS