আলাওল করিম : প্রতিষ্ঠার ২০ বছর পেরোলেও শিক্ষক সংকট যেনো কাটছেই না জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের। প্রতিবছর নতুন নতুন বিভাগ খোলা হচ্ছে,

আলাওল করিম :
প্রতিষ্ঠার ২০ বছর পেরোলেও শিক্ষক সংকট যেনো কাটছেই না জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের। প্রতিবছর নতুন নতুন বিভাগ খোলা হচ্ছে, শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বাড়ছে অথচ সেই অনুপাতে বাড়ছে না শিক্ষক সংখ্যা। ফলে ন্যূনতম প্রয়োজনীয় শিক্ষকের অর্ধেকও না থাকায় থমকে আছে পাঠদান, ব্যাহত হচ্ছে গবেষণা আর জ্ঞানচর্চা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, বর্তমানে ১০ হাজার ৮০৯ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। আন্তর্জাতিক মানদ-ে প্রতি ২০ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন পূর্ণকালীন শিক্ষক থাকা উচিত। সেই হিসেবে অন্তত ৫৪০ জন শিক্ষক থাকা দরকার। কিন্তু বাস্তবে আছেন মাত্র ২২০ জন, তার মধ্যেও অনেকে আবার শিক্ষা ছুটিতে। কার্যত সক্রিয় শিক্ষক সংখ্যা নামমাত্র।
২৬টি বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের মধ্যে নয়টি বিভাগে শিক্ষক সংখ্যা হাতেগোনা পাঁচজন বা তারও কম। কিছু বিভাগে এমন অবস্থা যে, প্রায় পুরো সিলেবাসই অসম্পূর্ণ থেকে যায়। ইনস্টিটিউট অব নজরুল স্টাডিজে নেই একজন শিক্ষকও। মার্কেটিং, নৃবিজ্ঞান আর দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থীরা মাত্র চারজন শিক্ষকের উপর নির্ভর করে পড়াশোনা চালাচ্ছেন। সমাজবিজ্ঞান বিভাগে তো কার্যত দুইজন শিক্ষক দিয়ে পুরো বিভাগ সামলানো হচ্ছে।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, তিন-চারজন শিক্ষক দিয়ে একাধিক ব্যাচ ও কোর্স সামলানো সম্ভব নয়। বাইরে থেকে শিক্ষক এনে ক্লাস নিলেও সিলেবাসের বড় অংশ শেষ হয় না, পরীক্ষা দেরিতে হয়, ফল প্রকাশে বিলম্ব ঘটে। অনেক সময় কোর্স শেষ না করেই পরীক্ষা দিতে হয় শিক্ষার্থীদের। এতে তারা নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছেন।
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মো. ইউসুফ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষা হচ্ছে না। পড়াশোনায় পিছিয়ে যাচ্ছি। অভিযোগ জানালেও শিক্ষক সংকটের কথাই বলা হয়। কিন্তু আমরা তো আর জীবনের সময় ফেরত পাব না।
মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী রাতুল রহমানের ভাষায়, একজন শিক্ষককে যখন অতিরিক্ত ক্লাস নিতে হয়, তখন মানসম্মত শিক্ষা দেওয়া সম্ভব হয় না। বিশ্ববিদ্যালয় শুধু সিলেবাস শেষ করার জায়গা নয়, এখানে জ্ঞান সৃষ্টি হওয়ার কথা। কিন্তু সংকটের কারণে সেই মূল লক্ষ্যই হারিয়ে যাচ্ছে।
শিক্ষকরাও এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মো. আব্দুল মোমেন বলেন, আমাদের চারজন শিক্ষক দিয়ে পাঁচ ব্যাচের ২৫টি কোর্স চালানো সত্যিই কষ্টসাধ্য। গবেষণা বা সেমিনারের মতো শিক্ষার্থীর উন্নয়নমূলক কার্যক্রম করার সুযোগই থাকে না।
ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ শামসুজ্জামান আরও স্পষ্ট করে বলেন, পর্যাপ্ত শিক্ষক ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় মানেই কেবল সেশনজট, মানহীন শিক্ষা আর হতাশ ছাত্রছাত্রী। ইউজিসি’র নির্দেশিত ওবিই পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা তো দূরের কথা, সাধারণ শিক্ষাদানই ব্যাহত হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. জাহাঙ্গীর আলম করে জানান, বিষয়টি আমরা বারবার ইউজিসিকে জানিয়েছি। চিঠি দিয়েছি। আশ্বাস মিললেও এখনো কোনো অগ্রগতি নেই। অনুমোদন ছাড়া আমরা নতুন শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারি না।
দুই দশক পেরিয়েও যখন শিক্ষার্থীরা অসম্পূর্ণ সিলেবাস, নিয়মিত ক্লাসের অভাব আর সেশনজটে জর্জরিত, তখন প্রশ্ন উঠছে এমন উচ্চশিক্ষা দিয়ে কি সত্যিই মানসম্মত মানবসম্পদ তৈরি সম্ভব? শিক্ষক সংকটের এই দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা কবে কাটবে, তার অপেক্ষায় দিন গুনছে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
COMMENTS